বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন
কামরুল হাসান, মিরসরাই : দীর্ঘ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ মধ্যেরাত থেকে সাগরে মাছ ধরতে নামছেন মিরসরাইয়ের জেলেরা। রোববার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে সাগরে মাছ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এদিকে সাগরে নামতে ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন জেলেরা। কেউ মেরামত করছে নৌকা। কেউ বুনছে জাল। কেউ করছে নৌকা ধোয়া-মোছার কাজ। বড় বড় ফিশিং ট্রলারগুলো নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার নিয়ে নিচ্ছেন ট্রলারে। অনেকদিন পর সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সুনশান নীরব ঘাটগুলো হয়ে উঠছে কর্মচঞ্চল। সাগরে মাছধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ (৩ নভেম্বর) রোববার মধ্যরাত থেকে। রাত ১২টার পর সবাই নদীতে নেমে পড়বেন মাছ শিকারে।
উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী ইলিশ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা সাগরে নামছেন ট্রলারে জাল আর খাবারের রসদ নিয়ে। পাইকার ও আড়তদারদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ঘাটগুলো। বিগত সময়ে সাগরে মাছ কম ধরা পড়লেও এবার আশায় বুক বাঁধছেন তারা। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবারও ইলিশ পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন জেলেরা। তাদের অভিযোগ, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় পাশের নদী সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে মাছ ধরার কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ফলে ওইসব দেশের জেলেরা চুরি করে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার ভেতর থেকে মাছ শিকার করে থাকে। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশ নাও ধরা পড়তে পারে।
জানা গেছে, ইলিশসহ সব ধরনের মৎস্য আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় ১৩ অক্টোবর থেকে। আজ ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সব নদ-নদী ও সাগরে জারি ছিল এই নিষেধাজ্ঞা। মাছ বন্ধ থাকাকালীন ১৫ হাজার জেলে পরিবারেরর মাঝে সরকারিভাবে ২৫ কেজি করে চাল প্রদান হয়েছে। যদিও এ উপজেলায় ২৬০০ নিবন্ধিত জেলে রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় দুই হাজার ৫৫৭ জন্য নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালে নিবন্ধিত জেলেদের সরকার থেকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় জেলেরা সাগরে মাছ আহরণের সব প্রস্তুতি নিয়েছে তাঁরা।দেশের পাঁচটি ইলিশ প্রজনন পয়েন্টের একটি মিরসরাইয়ের উপকূলীয় সাহেরখালী এলাকা। নিষেধাজ্ঞার কারণে ২২ দিন ধরে বেকার হয়ে ছিল উপজেলার উপকূলীয় এলাকার ২৯টি জেলেপাড়ার বাসিন্দারা।
ডোমখালী এলাকার বাদল জলদাশ বলেন, ‘২২ দিন পর নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের কিছুটা উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও পাশাপাশি ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। অনেকের ঋণ রয়েছে। কিন্তু ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিশোধ সম্ভব হয়নি। এখন মাছ ধরে নিজেও চলতে হবে, ঋণও পরিশোধ করতে হবে। এবার অনেক আশায় নিয়ে আমরা সাগরে নামবো। কারণ গত বছর আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যায়নি। আশা করছি, এ বছর প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে। মিরসরাই উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ‘ইলিশের প্রজননকালীন ২২ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বর্তমানে মাছের উৎপাদন বাড়ছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারলে বঙ্গোপসাগর একটি সমৃদ্ধ মৎস্য ভান্ডারে পরিণত হবে।’তিনি আরো বলেন, ‘রোববার রাত ১২টায় ২২ দিনের সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলেরা সব প্রস্তুতি নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গেছে।